দাঁত ব্যাথার কারন ও করণীয়

দাঁত ব্যাথার কারন ও করণীয়

আমাদের খাদ্যভ্যাস, সঠিকভাবে দাতের যত্ন না নেয়া, অবহেলা ও নানা অনিয়ম কারনে দাতের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগে থাকি। তাই বলে হা হুতাশ বা চিন্তার কোন কারন নেই। সঠিক চিকিৎসায় আমাদের দাতের সমস্যাগুলো আমরা দুর করতে পারি। দাঁত ও মাড়ির বিভিন্ন ধরণের সমস্যার কারণে হতে পারে দাঁত ব্যথা। যেমন- ক্যাভিটি, মাড়ির সমস্যা, দাঁতে ইনফেকশন, দাঁত দিয়ে রক্ত পরা, দাঁতের গোঁড়া আলগা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। যেকোনো ব্যক্তির যেকোনো সময় দেখা দিতে পারে এ সমস্যা। আমরা জেনে নিই দাত ব্যাথার কারন ও ঘরোয়া কিছু চিকিৎসা, যা কিছুটা হলেও আমাদের সবার উপকারে আসবে। 

- দাত ব্যাথার কিছু কারন -
১) আমাদের দৈনন্দিন খাবারের কিছু অংশ দাতের ফাঁকে জমে থাকার কারনে মুখের মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে তা এক প্রকার প্লাক সৃষ্টি করে। যা আস্তে আস্তে কঠিন হতে পাথরে পরিণত হয়। এভাবে এক সময়ে তা ব্রাশ করেও সুফল পাওয়া যায় না। এতে দাতের মধ্যবর্তি স্থানে/ফাঁকা স্থানে মাড়িতে প্রদাহ (Inflammation) হয়ে ফুলে গিয়ে রক্ত পড়া শুরু করে। শুরুর দিকে কিছুদিন বিপরতিতে কম মাত্রায় ব্যাথা অনুভুত হলেও যা ধীরে ধীরে বেড়ে গিয়ে অসহ্য ব্যাথার কারন হয়ে দাড়ায়।
২) দন্তক্ষয় বা ডেন্টাল ক্যারিজ এর কারণে সৃষ্ঠ রোগ, পালপাইটিস ও আক্কেল দাঁত বা উইজডম দাঁতের অসমান অবস্থানের কারণে, মুখের ভিতরের বিভিন্ন ধরণের ক্ষতের কারনে ব্যথার কারণ হতে পারে
৩) উইজডম দাঁত বা আক্কেল দাঁতের আকা-বাঁকা বা বেপরোয়া অবস্থানের কারনে পার্শ্ববর্তী দাঁতের উপর চাপ সৃষ্টি করে প্রদাহ সৃষ্টি করে। 
৪) রক্তশূন্যতা, হিমোফিলিয়া, পারফিউরা, ক্যানসার, এমনকি কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে দেখা যায় এবং দাতে ব্যাথা অনুভুত হয়।
৫) বিশেষ করে অপুষ্টিজনিত কারণে যেমন, ভিটামিন সির অভাবে মাড়ি দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এতে দাতের গোড়া দূর্বল হয়ে পড়ে দাত নড়ে গিয়েও দাত ব্যাথার কারন হতে পারে।
৬) মায়েদের গর্ভাবস্থায় হরমোনের সমস্যাজনিত কারনে মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হতে দেখা যায় এবং ব্যথা অনুভুত হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে তেমন সমস্যার সৃষ্টি করে না। সন্তান জন্ম নেয়ার পর বেশিরভাগই সুস্থ হয়ে যায়।

ঘরোয়া চিকিৎসা : ঘরোয়া উপায়ে সহজেই দাঁত ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আসুন জেনে নেই সেই উপায়গুলো সম্পর্কে। 

লবঙ্গ-
লবঙ্গ আমরা সবাই চিনি, এটি দাতের একটি মহৌষধ। ব্যথার স্থানে একটা লবঙ্গ ব্যাথা না কমা পর্যন্ত রাখুন। আরও ভাল ফলাফলের জন্য লবঙ্গ চূর্ণের সঙ্গে পানি বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে পেস্ট বানিয়েও ব্যাথার স্থানে লাগাতে পারেন।

কালোজিরা: 
দাঁত ব্যথা হলে, মাঢ়ি ফুলে গেলে বা রক্ত পড়লে কালোজিরায় উপকার পাওয়া যায়পানিতে কালোজিরা দিয়ে আগুনে ফুটিয়ে নিন। ফুটানো পানি তাপমাত্র কমে উষ্ণ অবস্থায় এলে তা দিয়ে কুলি করুন। এতে দাঁত ব্যথা কমে যাবে, মাঢ়ির ফোলা বা রক্ত পড়া বন্ধ হবে।
পেঁয়াজ-
দাতের ব্যাথার স্থান নির্ধারণ করে পেয়াজ কাটা আক্রান্ত স্থানে চিবাতে থাকুন যদি চিবাতে কষ্ট অনুভুত হয় তাহলে কাটা পেয়াজ ব্যাথার স্থানে রাখুন। পেঁয়াজের অ্যান্টিসেপ্টিক উপাদান দাঁতের জীবাণু নষ্ট করে দাঁতের ব্যথা উপসমে সহায়তা করে।
রসুন-
রসুনের এন্টিবায়োটিক উপাদান যা বিভিন্ন রোগ প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে। তেমনি দাঁতের সংক্রমণ জনিত ব্যথায়ও যথেষ্ট কাজ দেয়। একটি রসুন থেতো করে তাতে পরিমান মত লবন মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দিন। ব্যাথা কমে গিয়ে আরামবোধ করবেন।
উষ্ণ লবণ পানি-
এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে লবন মিশিয়ে বেশ কয়েকবার কুলি করতে থাকুন। এতে দাতের টিস্যু সচল হয়ে উঠবে। জীবাণুর কারণে দাঁতের ব্যথা হলে তা কমে যাবে। মাড়িতে রক্ত চলাচল বাড়ার কারণে সাময়িকভাবে ব্যাথা কমে আসবে।
ব্যাথানাশক ক্যাপসুল -
ব্যাথানাশক ট্যাবলেট যেমন ডকসিন ক্যাপসুল আক্রান্ত বা ব্যাথার স্থানে দাত দিয়ে চিবিয়ে রাখুন কিছুক্ষন পর ব্যাথা কমে যাবে।
পেয়ারা পাতা -
দাঁতের ব্যথায়  পেয়ারা পাতা পরীক্ষিত।  ২/৩ টা কচি পেয়ারা পাতা পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে দাত দিয়ে চিবোতে থাকুন। কিছুক্ষন পর দেখা যাবে দাঁতের ব্যথায় কাজ শুরু না করে দিয়েছে। তাছাড়া পেয়ারা পাতা গরম পানিতে সিদ্ধ  করে পানি ঠান্ডা করে কুলকুচি করতে থাকুন। দেখবেন ব্যাথা অনেকাংশে কমে গেছে।
ইতি কথা -
আমরা উল্লেখিত কারনগুলো চিহ্নিত করে সমস্যা সৃষ্টির আগে দাতের সঠিক যত্ন নিতে পারি। তথাপি কারো এধরনের ব্যাথা সৃষ্ঠি হলে ঘরোয়া চিকিৎসাগুলো করতে পারি। তবে  ঘরোয়া চিকিৎসায় ফলাফল যতই আমাদের অনুকুলে থাকুক না কেন, মনে রাখতে হবে দাতের রোগ খুবই স্পর্ষকাতর। যথাযথ চিকিৎসা না হলে বড় ধরনের সংক্রমন হতে পারে। নিয়মিত খ্যাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং সঠিক নিয়মে ব্রাশ করতে হবে। দাতের গোড়ায় পাথর জমলে একজন অভিজ্ঞ ডেন্টিস্টের কাছ থেকে দাঁত স্কেলিং করিয়ে নেওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ মতে জানা যায়, সুস্থ দাতের জন্য বছরে ২/১ বার দন্তবিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন অবশ্যই দরকার।

Post a Comment

0 Comments