রোজাদারের শারীরিক পরিনতি
ইমরান আলী সরকার
রোজা হচ্ছে রবের সাথে বান্দার পরম সানি্নধ্য
লাভের সেতুবন্ধন এবং মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি, সুস্বাস্থ্য ও
সফলতা অর্জনের অন্যতম গুরত্বপূর্ণ মাধ্যম। অথচ চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, রোজা মানুষের
শারীরিক নানা সমস্যা সমাধানে গুরত্বপূর্ণ প্রতিষেধক। রমজান মাস কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে এ মাসের গুরুত্ব আল্লাহ পাকের কাছে
অসীম প্রিয়। পবিত্র রমজান মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। রোযার
ধর্মীয় গুরুত্বের সাথে বিজ্ঞানিক দৃষ্টিতেও রোযার উপকারিতা অপরসীম। রমযানের
ধর্মীয় গুরুত্ব জানার পরও অনেকে স্থাস্থ্যহানী হবে, রোগ বেড়ে যাবে, শারীরিক
সমস্যা হবে ইত্যাদি অজুহাতে রোযা থাকা থেকে বিরত থাকেন। যারা এই বাহানা করে তাদের
জন্য আজকের লিখা।
মেদবহুল লোকের জন্য সুখবর -
যারা কিছুতেই ওজন
কমাতে পারছেন না তাদের জন্য রোযা একটা উত্তর টনিক। রোযা এতই কার্যকরী যে যা বলে
শেষ করা যাবেনা। কেনা আপনি একান ডাক্তারের কাছে গেলে বলেন, আপনি খাদ্যাভ্যাস
পরিবর্তন করেন। খাদ্য নিয়ন্ত্রন করা না গেলে ওজন কমানো যাবেনা। তাই ওজন কমাতে
চাইলেও রোজা বা উপবাস আপনার জন্যে খুব কার্যকরী। বিভিন্ন গবেষনায় দেখা যায়, ওজন কমাতে নিয়মিতভাবে উপবাসের মাধ্যমে ভাল ফল লাভ করেছে। তাই
ওজন নিয়ণ্ত্রণের জন্যে রুটিন মাফিক উপবাস একটি ভালো পন্থা হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে।
দেহের ওজন কমাতে চাইলেও রোজা বা উপবাস আমাদের জন্য
উত্তম কার্যকরী। ডা. এফ. এম গ্রিমী বলেন_ 'রোজার
সামগ্রিক প্রভাব মানব স্বাস্থ্যের ওপর অনড়, অটল, অটুটভাবে প্রতিফলিত
হয়ে থাকে এবং রোজার মাধ্যমে কেবল শরীরের বিশেষ বিশেষ অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোর
ক্লান্তিই দূর করে না, বরং দেখা গেছে যে, এগুলো যথেষ্ট
শক্তিশালী হয়ে ওঠে।'
বাধ্যক্য রোধে
রোযার উপকারীতা -
আমেরিকার
স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব এজিংয়ের ড. মার্ক পি ম্যাটসন ও তার সহকর্মীরা দেখান যে, নিয়মিত ডায়েটিং করলে মানুষের দেহে যে প্রভাবগুলো পড়ে রমযানের
রোযায়ও একই প্রভাব ফেলে। উপবাসের ফলে দেহে এমন কিছু প্রোটিন উৎসারিত হয় যেটা
মস্তিষ্কের কোষগুলোকে অক্সিডেশনজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং স্নায়ুকোষের উৎপাদন
বাড়িয়ে দেয়। উক্ত প্রতিষ্ঠানের গবেষনায় দেখা যায়-বয়সজনিত রোগ যেমন, অ্যালঝেইমার, হান্টিংটন বা পার্কিনসন্সের ঝুঁকি
অনেকখানি কমে যায়। তারা দেখেন, কয়েক ঘণ্টা পর
পর নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ রক্তে শর্করার মান সবসময় উঁচু রাখে। শক্তি উৎপাদনের জন্য এই
শর্করাকে বিপাক হতে হয়। এই বিপাকের একটি উপজাত হলো জারণ। এই জারণের ফলে দেহে
সৃষ্টি হয় অস্থিতিশীল অক্সিজেন অণু, যার সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক পরিণতি হলো বুড়িয়ে যাওয়াকে ত্বরান্বিত করা। কিন্তু
রোজা বা উপবাস এ প্রক্রিয়াকেই পাল্টে দেয়। অনাহারের ফলে দেহে যে সাময়িক শক্তি সংকট
হয় তা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে প্রোটিন উৎপাদনে উৎসাহ দেয়, এমনকি নতুন ব্রেন সেলও জন্মায়। ডা. আব্রহাম জে হেনরী বলেছেন_ 'রোজা হলো
পরমহিত সাধনকারী ওষুধ বিশেষ।'
কোলেষ্টরল
ঝুকি কমায় -
এক
সমিক্ষায় দেখা যায় যারা রমজানের ২৯/৩০ দিন রোজা রেখেছে তাদের দেহের ওজন বা
সুস্থতার ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা পড়েনাই তবে, তাদের রক্তের লিপিড প্রোফাইলের
ওপর চমৎকার প্রভাব বিস্তার করেছে। তাদের রক্তে এলডিএল
বা ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমেছে। তাই শুধু মুসলিমরাই নয় অমুসলিমরাও তাদের বিভিন্ন উপবাসকালীন সময়ে এই
প্রভাব লক্ষ্য করেছেন। ডা. বিধানচন্দ রায়“রমজানের রোযাকে একটি সুন্দর
ও পবিত্র অষুধ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।
রোযাদারদের
লক্ষ্যনীয় বিষয় -
ইফতার
ও সেহরীর সময় ভাজা-পোড়া খাবার পরিত্যাগ করবেন। ইফতার বা সেহরির সময় রোজা পালনের পর
ভাজা-পোড়া খাবার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তেল উচ্চ মাত্রায় বার বার তাপ
দেয়ার ফলে এক ধরনের জৈব হাইড্রোকার্বন তৈরি করে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত
ক্ষতিকর। যাহা ধীরে ধীরে মানুষের হজমশক্তি নষ্ট করে ফেলে। যার কারনে বদহজম, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, ডায়রিয়া, পাকস্থলী জ্বালা-পোড়াসহ নানা
ধরনের জটিল রোগের সৃষ্টি হয়।
“হযরত
আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে
ব্যক্তি ওজর অথবা রোগ ব্যতীত রমজান মাসের একটি রোজা ভঙ্গ করবে, সে যদি তার পরিবর্তে সারা
বছরও রোজা রাখে। তবেও ওটার সমকক্ষ হবে না।” (আহ্মদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনে
মাযাহ্)
তাই বন্ধুরা আসুন আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায়, দৈহিক ও আত্মার
প্রশান্তির জন্য রোজা পালন করি এবং রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করি।
0 Comments