নাজিরহাট কলেজ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস

নাজিরহাট কলেজ প্রতিষ্ঠার ইতিকথা

অত্র এলাকায় একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার মর্ম উপলব্ধি করেছিলেন মাওলানা আফজল আহমদ চৌধুরী (প্রয়াত)। তৎকালীন পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুতে শোকসভার আয়োজন চলছিল ফটিকছড়ি করোনেশন উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সভাপতিত্বে শোকসভা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। সময়টা ছিল ১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস। শোক সভার এক পর্যায়ে সভায় স্কুলের আরবি শিক্ষক মওলানা আফজল আহমদ চৌধুরী উত্তর চট্টগ্রামে একটি ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। শোকসভা শেষে মওলানা আফজল আহমদ চৌধুরী তাঁর কয়েক স্নেহভাজন ছাত্র নিয়ে কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে কয়েকজন প্রিয় ছাত্রকে সদস্য করে কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য কমিটি গঠন করেন।

মাওলানা আফজল আহমদ সাহেব কলেজ প্রতিষ্ঠার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী এলাকার বিভিন্ন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের নিকট পত্র লিখে তাঁর ছাত্রদের মাধ্যমে পাঠাতেন। এভাবে কলেজ প্রতিষ্ঠার গুরুত্বের দিক প্রচার করে জনমত তৈরী করেন।

কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা
ব্যাপকভাবে প্রচারিত হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপক সাড়া আসে। এক পর্যায়ে নাজির হাট আহমদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে ফটিকছড়ির তৎকালীন মুন্সেফ জনাব এ.কে.এম ফয়জুর রব চৌধুরীর সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় চুতুর্পাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু লোকের সমাগম হয় এবং তাতে কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা এক বাক্যে স্বীকৃত হয়। অত:পর ১৯৪৯ সালে নাজিরহাট বাজারের হালদা ব্রীজের পশ্চিম পাশে বাঁশের বেড়া ও খড়ের ছাউনিযুক্ত গৃহে কলেজের পাঠদান আরম্ভ হয়।

সর্বপ্রথম ১৯৫১ সালে মানবিক বিভাগে নাজির হাট কলেজে ঊনচল্লিশ জন ছাত্র আইএ পরীক্ষা দেন। তন্মধ্যে মাত্র তিনজন ছাত্র উত্তীর্ণ হন। অন্যরা অকৃতকার্য হন। পরের বছর কলেজের বাণিজ্য বিভাগ খোলা হয়। চট্টগ্রাম সরকারি বাণিজ্য কলেজের একজন অধ্যাপক সপ্তাহে দুদিন করে নাজিরহাট কলেজে এসে ক্লাস নিতেন। কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের অবসর গ্রহণ করা পার্সি ভাষার একজন অধ্যাপক। এর কিছু দিন পরে মাহমুদ সাহেব নামের একজন অবাঙালি কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন।

নাজিরহাট কলেজ প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্ররা এসে কলেজে ভর্তি হতে থাকে।
শুধু পার্শ্ববর্তি এলাকা নয় চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এই কলেজে ভর্তি হতে থাকে। হালদা নদীর পশ্চিম পাশে ছোট স্রোতস্বিনী মন্দাকিনী খালের দক্ষিণ পাশে দশ কানি জমি স্থানীয় একজন ভদ্রলোক কলেজের জন্য দান করেন। ১৯৫৬ সালে উক্ত দশ কানি জমির উপর পাকা দালান গৃহ নির্মাণ করা হয় এবং সামনে একটি দীঘি খনন করা হয়। অধ্যক্ষ এবং অধ্যাপকদের জন্য আলাদা করে কোয়ার্টার তৈরি করা হয়। এভাবে কলেজটি একটি প্রথম শ্রেণির কলেজের মর্যাদা লাভ করে।

(তথ্য সূত্র: অনলাইন)

Post a Comment

0 Comments