ফটিকছড়ির ইতিহাস

ফটিকছড়ির ইতিহাস

ফটিক অর্থ স্ফটিক স্বচ্ছ, নির্মল ও ছড়ি অর্থ পাহাড়ি ছোট খাল, নদী, ছড়া ও জলাধার নিয়ে ৭২০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থান। ফটিকছড়িতে রয়েছে অসংখ্য ছড়া বা খাল। এর বেশিরভাগই সীতাকুন্ড পাহাড় থেকে সৃষ্ট। আর সবচেয়ে মজার বিষয় সীতাকুন্ড পাহাড় ঘিরে সব ছড়ির ছড়াছড়ি। যেমন- হারুয়ালছড়ি, কেড়াছড়ি, ধুলছড়ি, রত্তাছড়ি. পটিয়ালছড়ি, শোভনছড়ি ইত্যাদি। যারা সীতাকুন্ড পাহাড়ে ভ্রমন করেছে তারা হয়তো দেখে থাকবেন, পাহাড়ের উপর অসংখ্য জলাধার যাহা বৃষ্টি ও পাহাড়ি পাথর ঘেমে সৃষ্টি হয়েছে।   পশ্চিমে সীতাকুন্ডু পাহার থেকে উৎপন্ন ছোট ছড়া যেমন- হেরলী, ডলুঘন্যা, নাকোঁয়া, পিনপিন্যা ও লইক্ষ্যা, ইক্ষা প্রভৃতি মিলিত স্রো্ত ধারার নাম- ফটিকছড়ি।  এসমস্ত ছোট ছোট খালগুলো বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ফটিছড়ি খাল, ধুরুং খাল, মন্দাকিনী খালে মিলিত হয়েছে। ফটিছড়ির উত্তর-পশ্চিমাংশে ফটিকছড়ি খাল, দক্ষিনাংশ দিয়ে মন্দাকিনী খাল, সুয়াবিল হয়ে ধর্মছড়ি খাল প্রবাহিত হয়ে হালদা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। ফটিকছড়ি নামক জনপদের অবস্থান ছিল ফটিকছড়ি খাল ঘিরে। এখনো পুর্ব ও পশ্চিম ফটিকছড়ি নামের দুইটি গ্রাম বিদ্যমান। পরবর্তীতে যোগাযোগ ও ব্যবসায়িক সুবিধার কারন সমুহ বিবেচনায় রেখে মুল ফটিকছড়ি পুর্ব অবস্থান হতে স্থানান্তরিত হয়ে ধুরুং ইউনিয়নে স্থানান্তরিত হয়। ১৯১৮ সালে ফটিকছড়ি থানার সৃষ্টি হয়।

ফটিকছড়ির অবস্থান- বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার অন্যতম ও সবচেয়ে বড় উপজেলা হচ্ছে ফটিকছড়ি। ভৌগলিক ও প্রকৃতিকভাবে খুবই সুন্দর এই ফটিকছড়ি। ফটিকছড়ি উপজেলার দক্ষিণ-পূর্বাংশে ধর্মপুর ইউনিয়নের অবস্থান, দক্ষিণে আবদুল্লাহপুর ইউনিয়ন,পশ্চিমে বখতপুর ইউনিয়ন ও জাফতনগর ইউনিয়ন,উত্তরে নানুপুর ইউনিয়ন এবং পূর্বে খিরাম ইউনিয়ন ও রাউজান উপজেলারহলদিয়া ইউনিয়ন অবস্থিত। এই সুন্দর ফটিছড়ির পুর্বে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম, পশ্চিমে মীরস্বরাই ও সীতাকুন্ড, উত্তরে রামগড় ও ভারত সীমান্ত প্রদেশ ত্রিপুরা দক্ষিনে হাটহাজারী উপজেলা।  হালদা, ধুরুং, ফটিকছড়ি খাল, মন্দাকিনী খাল, ধর্মছড়ি খাল, হারুয়ালছড়ি খাল, লেলাং খালসহ অসংখ্য ছোট-ছোট খালের সমন্বয়ে ফটিছড়ির শোভা ও উর্বতা বৃদ্ধি করেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্য লীলা নিকেতন সবুজে ঘেরা সুন্দর উপজেলায় রয়েছে অসংখ্য বনভূমি, চা বাগান, রাবার বাগান, সেগুন বাগান। 
ইতিহাস ও ঐতিহ্য- ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিক বিবেচনা করলে অত্র অঞ্চলের নাম প্রথম সারিতে থাকবে। চট্টগ্রাম ভিত্তিক ইসলাম প্রচারে ফটিকছড়ির অবস্থান সবার আগে। এখানে রয়েছে বিশ্বখ্যাত সুফী-সাধক, আউলিয়া-দরবেশের অবস্থান। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ফটিকছড়ির ভূমিকা ছিল চিরস্মরণীয়। এখানে অসংখ্য বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা ও অসংখ্য রাজনীতিবিদ। ফটিকছড়ির উলেত্মখযোগ্য স্থান বা স্থাপনাগুলো হচ্ছে- প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন ও স্থাপনাগুলোর মধ্যে বক্তপুরের আহসান উল্লাহ গোমস্থার মসজিদ, আজাদী বাজারে অবস্থিত মুরালী মসজিদ, জাফতনগর ফতেপুরে জুনিয়র বাপের মসজিদ, পশ্চিম সুয়াবিল চুরখাহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, মাইজভান্ডার শরীফ, আবদুল্লাহপুরের লাইল্লা হরাইল্লার মসজিদ, বিবির দীঘি,প্লাজির দীঘি, নল্লর দীঘি, আদালতখার বাড়ী, কোটেরপারড়, আবিদ শাহের মাজার, জাহানপুরের কুন্ডুর কাচারী, বড়ুয়া পাড়ার কেয়াং, আবদুল্লাহপুর মন্দির, হারুয়ালছড়ির কোম্পানীটিলা, ভুজপুর ফাঁসির ঘর, শ্মশান কালিমট, বন্দে রাজা মসজিদ, মুন্সি গরীবুল্লাহ জামে মসজিদ, আজাদী বাজারের আয়না দিয়া মসজিদ, সুয়াবিলে বৈরাগ্য খোলা, সুয়াবিলের হলদার টিলার কবরস্থান, হরইস্যা মসজিদ, কাঞ্চনপুরের উকিল বাড়ী, জাহানপুরের মুফতি মসজিদ, পাইন্দং এর পেলাগাজী মসজিদ ও দিঘী, হাইদচকিয়া বৌদ্ধ বিহার এবং গুরুদাশ ঠাকুরের মন্দির উল্লেখযোগ্য। উল্লেখযোগ্য বাজারগুলো হচ্ছে বিবিরহাট, নাজিরহাট, দাতমারা, হেয়াঁকো বাজার, নারায়নহাট, চুরখাঁহাট, বৈদ্যেরহাট, কালুমুন্সির হাট, কাজিরহাট, মোঃ ককিরহাট ও আজাদী বাজার।


মহান মুক্তিযুদ্ধে ফটিকছড়ির অবস্থান -  ১৯৭১ সালের মার্চে এম আর সিদ্দিকী, মেজর জিয়াউর রহমান, জোনাল কমান্ডার মির্জা আবু মনসুর এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা রামগড়ে মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্প স্থাপন করেন। ট্রেনিং নেওয়ার জন্য চট্টগ্রামের  মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে যেত ফটিকছড়ি হয়ে
এবং ট্রেনিং নিয়ে ফিরত একই পথে। এ কারণে ফটিকছড়িকে চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবেশদ্বার বলা হয়। এ উপজেলার নানুপুর গ্রামের আবু সোবহান স্কুলের মাঠে ছিল শরণার্থী শিবির। মুক্তিযুদ্ধে ফটিকছড়ির প্রায় ১৫০০ মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন।

তথ্যসূত্র: ফটিকছড়ি উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন, বাংলাপিডিয়া।


Post a Comment

0 Comments