দর্শনীয় স্থান কক্সবাজার

 অন্যতম সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার

কক্সবাজার: ক্সবাজার বাংলাদেশের একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। কক্সবাজারের আদি নাম পালংকী। অপরিসীম সৌন্দর্যের অধিকারী এই কক্সবাজার। এই সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে প্রাচীনকালে মোগল, পর্তুগিজ, আরকান, ব্রিটিশরা এখানে এসে অবস্থান করেছে এবং কক্সবাজারের উন্নয়ন সাধন করেছে। ১৭৭৩ সালের দিকে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স কক্সবাজারে ব্রিটিশ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। তিনি এ অঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়নে কাজ করেন। কক্সবাজারের আদি নাম ছিল পালনকি। ক্যাপ্টেন কক্স ১৭৯৯ সালে মৃত্যুবরণ করলে তার নামানুসারে পালনকি নাম পরিবর্তন করে কক্সবাজার নামকরণ করা হয়। ১৭৯৯ সালে  বৃটিশ (Captain Hiram Coxs) নামের একজন এখানে এসে একটি বাজার স্থাপন করেন। আর তার নাম অনুসারে কক্স সাহেবের বাজার এবং পরে কক্সবাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ কক্সবাজারের আরেকটি নাম পানোয়া যার অর্থ দাড়ায় হলুদ ফুল। 


অবস্থান: কক্সবাজারের আয়তন: ২৪৯১.৮৬ বর্গ কিমি এটি চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত বাংলাদেশের দক্ষিণ-পুর্বাঞ্চলে অবস্থিত উত্তরে চট্টগ্রাম জেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে বান্দরবান জেলা, মায়ানমারের আরাকান রাজ্য নাফ নদী, পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর কক্সবাজারে পৃথিবীর দীর্ঘতম ও অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকতের অবস্থান, যার দৈর্ঘ ১৫৫ কিলোমিটার বা ৯৬ মাইল। তাছাড়া এখানে রয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তম সামুদ্রিক মৎস বন্দর ও সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং ষ্টেশন। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের মোট ১১টি জেলার মধ্যে সপ্তম এবং বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ২৬তম জেলার প্রায় অর্ধেক এলাকা জুড়ে পার্বত্য অঞ্চল এবং অর্ধেক সমুদ্র উপকূলীয় দ্বীপাঞ্চল কক্সবাজার সংলগ্ন ও বঙ্গোপসাগরে রয়েছে অসংখ্য দ্বীপ। তার মধ্যে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, সেন্ট মার্টিনস, শাহ পরীর দ্বিপসহ অসংখ্য ছোট বড় দ্বিপ।

কিভাবে যাবেন: চট্টগ্রাম ও অন্যান্য জেলা হতে প্রায়ই বিলাসবহুল গাড়ী ছাড়ে। বাস কাউন্টারে গেলেই তারা জানিয়ে দেবে।   যারা চট্টগ্রাম থেকে যাবেন তারা নতুন চাঁন্দগাও থানার পাশ কিংবা নতুন ব্রিজ হতে যেতে পারবেন। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের চেয়ারকোচ। তাছাড়া গরিব উল্লাহ শাহ মাজার সংলগ্ন বিভিন্ন বাস কাউন্টার রয়েছে। সেখান থেকে বিলাসবহুল এসি গাড়ে ছাড়ে। বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ বেলাভূমি,

উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান সমূহ: পৃথিবীর দীর্ঘতম অখন্ডিত সমুদ্র সৈকত ঘিরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন দর্শনীয় নজরকাড়া স্থাপনা। এই সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন শামুক-ঝিনুকসহ নানা প্রজাতির প্রবাল সমৃদ্ধ দোকান অত্যাধুনিক হোটেল-মোটেল-কটেজ।  কেনা কাটার জন্য রয়েছে বার্মিজ মার্কেট সমূহপ্রায় ৯৬ কিলোমিটার পাহাড়ের সারি দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে। সুমুদ্রের পাড় ঘেষে মেরিন ড্রাইভ গেলে মনে হবে এটি একটি ভিন্ন জগত।

লাবনী বিচ: কক্সবাজারের প্রাণকেন্দ্র কলাতলীতে অবস্থিত লাবনী পয়েন্ট। কক্সবাজারের কলাতলী থেকে পায়ে কিংবা টমটম গাড়ীতে যেতে পারেন। এই সমুদ্র সৈকত ঘিরে গড়ে উঠেছে অনেক আকর্ষনীয় দোকান। সেখানে পাওয়া যাবে বিভিন্ন স্বাধের আচার ও সুটকি। তাছাড়া মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও চিন থেকে আসা চোখ জুড়ানো জিনসপত্র।

হিমছড়ি:  পাহাড়ী ঝর্ণা ও হিমছড়ির মূল আকর্ষন। কক্সবাজার থেকে প্রায় ১২ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত। পাহাড়, ঝর্ণা ও সবুজে ঘেরা বনানীর সৌন্দর্য মন জুড়ে যাবে। তাছাড়া পাহাড়ের চুড়ায় উঠলে সাগরের দৃশ্য অবলোকন করা যাবে যাহা সত্যি আলাদা একটা অনুভূতির সৃষ্ঠি করবে।

ইনানী সী বিচ: হিমছড়ি থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দক্ষিনে এই মনোমুগ্ধকর সমুদ্র সৈকত। এই সমুদ্র সৈকতের পানি অন্যান্য জায়গার চাইতে বেশি পরিষ্কার। যারা সমুদ্র স্নান করতে বেশি তারা এখানে মনের আনন্দে স্নান উপভোগ করতে পারবেন। সেন্ট মার্টিনের মতো ইনানি বীচে রয়েছে অসংখ্য পাথর। পড়ন্ত বিকেলের সুর্যাস্থ ও অনেকটা শান্ত সুমুদ্র দেখতে চাইলে চলে আসুন বিকেল বেলায়।

রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড: কক্সবাজার ভ্রমন পিপাসুদের অন্যতম আকর্ষন Radiant Fish World সেন্টারএটি পর্যটন নগরী কক্সবাজারের ঝাউতলায় অবস্থিত। রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডকে ৮টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। এখানকার মূল আকর্ষণ ফিশ এ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্স। এখানে প্রবেশ করলে বুঝতেই পারবেন না সময় কখন কেটে গেছে। এখানে আছে প্রায় শত প্রজাতির সামুদ্রিক ও মিঠা পানি মাছ। এ্যাকুরিয়ামে গেলে দেখা যাবে উপরে মাছ, ডানে মাছ, বামে মাছ। বিভিন্ন প্রজাতির মাছের ভিতর দিয়ে পথ চলতে হবে। হাটলে দেখতে পারবেন হঠাৎ সামনে পড়বে হাঙ্গর মানুষ খেকো পিরানহা, কচ্ছপ, কাঁকড়া, আউসসহ সাগরের তলদেশের নানা কিট পতঙ্গ। এখানে আছে নানা প্রজাতির পাখি, থ্রি- ডি মুভি দেখার বিশেষ সুযোগ,লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্ট, নানা প্রজাতির পাখি, ডিজিটাল কালার ল্যাব, শপিং ষ্পেস, শিশুদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা

মেরিন ড্রাইভ রোড: বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আকর্ষনীয় করে তোলা হয়েছে মেরিন ড্রাইভ রোড। কক্সবাজারের কলাতলী সৈকত থেকে দেশের শেষ প্রান্ত টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেরিন ড্রাইভ রোড। সাগর আর সড়কের অপরূপ সেতুবন্ধন এই রোড। এটির কল্যাণে সাগরের এবং স্থলের প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য একই সাথে উপভোগ করা যায়। রাস্তার পাশ দিয়ে বেড়ে ওঠা পুরো উপকূল জুড়ে ঝাউবাগান দেশি-বিদেশি পর্যটকদের বিমোহিত করছে। পর্যটকদের আকর্ষণের নতুন কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটি। এই রোডের একপাশে পাশে বিশাল সমুদ্র সমুদ্র সৈকত আর অন্যপাশে পাহাড় পাহাড়ের সারি বিশাল বিস্তৃত সৈকত, ইনানী পাথুরে সৈকত ও জেলেদের সাগরে মাছ ধরা উপভোগ করা যায় মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে যেতে যেতে।

Post a Comment

0 Comments