বিদআত’ কি ? কেন বিদআত পরিত্যাজ্য ?


বিদআতকি ? কেন বিদআত পরিত্যাগ করবো ?

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। বিদায় হজ্বের ভাষনে প্রিয় নবী (:) ঘোষন করেছেন, হে লোক সকল! আমার পর আর কোনো নবী নেই, আর তোমা


দের পর কোনো উম্মতও নেই।
 আমি তোমাদের কাছে দুটো জিনিস রেখে যাচ্ছি| যত দিন তোমরা এ দুটোকে আঁকড়ে থাকবে, তত দিন তোমরা গুমরাহ হবে না। সে দুটো হলো আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত। তোমরা দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকব কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা দীনের ব্যাপারে এই বাড়াবাড়ির দরুন ধ্বংস হয়েছে
তিনি আরো বলেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়ের লোকরা! তোমরা দুনিয়ার বোঝা নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে যেন আল্লাহর সামনে হাযির না হও। আমি আল্লাহর বিরুদ্ধে তোমাদের কোনোই উপকার করতে পারব না। যে ব্যক্তি নিজের পিতার স্থলে অপরকে পিতা বলে পরিচয় দেয়, নিজের মাওলা বা অভিভাবককে ছেড়ে দিয়ে অন্য কাউকে মাওলা বা অভিভাবক বলে পরিচয় দেয় তার ওপর আল্লাহর লানত
পরপূর্ণ জীবন বিধানের মধ্যে বর্তমানে যে পরিমাণ নতুন নতুন সিস্টেম চালু হচ্ছে, যা আল্লাহ আদেশ করেননি, নবী (:) করেননি এমনকি সাহাবায়েকেরামগণও করেননি। আজকে সাধারণ তুচ্ছ বিষয় বিষয় ইসলামের মধ্যে চালু করে সাধারণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। অথচ ইসলামের মূল ভিত্তি নিয়ে সবাই একমত। তাহলে কেন বিতর্কিত বিষয় নিয়ে এত মতভেদ?
বিদআত কি ?  বিদআত বলা হয় দ্বীন ও ইবাদতে নতুন আবিষ্কৃত কাজকে। অর্থাৎ যে সমস্ত কাজকে দ্বীন বা ইবাদত মনে করে করা এমন কাজকে বিদআত বলা হবে, যদিওবা কাজগুলো অনেকের ভাল লাগে। কিন্তু সে কাজের কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর কোন দলীল নেই। অনেকে বিভিন্ন রকম রেফারেন্স দিয়ে থাকে যা অদৌ স্বীকৃত নয়। কিন্তু আমাদের ইসলাম সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান না থাকার কারনে আমরা বিভ্রান্ত হচ্ছি। সেই জন্য  আমাদেরকে বেশি বেশি করে কোরআন-হাদীস অধ্যয়ন করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, তোমরা (দ্বীন) নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদআত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা। ৮১ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী) যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে (নিজের পক্ষ থেকে) কোন নতুন কিছু উদ্ভাবন করল--- যা তাঁর মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ৮২ (বুখারী ও মুসলিম) মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, যে ব্যাক্তি এমন কাজ করল, যে ব্যপারে আমাদের নির্দেশ নেই, তা বর্জনীয়।
বলা বাহুল্য, নব আবিষ্কৃত পার্থিব কোন বিষয়কে বিদআত বলা যাবে না। যেমন শরীয়াতে নিষিদ্ধ কোন কাজকে বিদআত বলা হয় না। বরং তাকে অবৈধ, হারাম বা মাকরূহ বলা হয়।
বিদআত সম্পর্কে মহানবী (সঃ) বলেছেন, অবশ্যই তোমাদের মধ্যে যারা আমার বিদায়ের পর জীবিত থাকবে তাঁরা অনেক রকমের মতভেদ দেখতে পাবে। অতএব তোমরা আমার ও আমার সুপথপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদ্বীনের  সুন্নাহ অবলম্বন করো, তা দাঁত দ্বারা দৃঢ়তার সাথে ধারণ করো। (তাতে যা পাও মান্য কর এবং অন্য কোনও মতের দিকে আকৃষ্ট হয়ো না।) আর (দ্বীনে) নবরচিত কর্মসমূহ হতে সাবধান! কারণ, নিশ্চয় প্রত্যেক বিদআত (নতুন আমল) হল ভ্রষ্টতা।(আবু দাঊদ ৪৪৪৩, তিরমিযী ২৮১৫, ইবনে নাজাহ ৪২ নং) আর নাসাঈর এক বর্ণনায় আছে, আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতা জাহান্নামে(নিয়ে যায়) উক্ত হাদিস থেকে এ কথাও প্রমাণ হয় যে, বিদআতে হাসানাহ (ভাল বিদআত) বলে কোন বিদআত নেই। কারণ মহানবী (সঃ) বলেছেন, প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা।
নবী করিম (:) এর এমন সুনির্দিষ্ট বাণী থাকা স্বত্তেও আমরা যাচাই বাছাই না করে যে রকম বলে তা সত্যি বলে মেনে নিচ্ছি। আর বিদাতের পেছনে আমরা অর্থ, সময় ও ঈমান বিলিয়ে দিচ্ছি। এই বিদআত না করে আমরা পরোপকারে অর্থ খরচ করি তাহলে আখেরাতের পথ কত সুগম হতো।
শেষ জামানায় যে বিদআন মহামারি আকার ধারণ করবে, তার জন্য প্রিয় নবী (:) আগাম হুশিয়ারী দিয়ে রেখেছেন, * রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,শুনে রাখো! হাউজে কাউছারের কাছে তোমাদের সাথে আমার দেখা হবে। তোমাদের সংখ্যার আধিক্য নিয়ে আমি গর্ব করব। সেই দিন তোমরা আমার চেহারা মলিন করে দিওনা। জেনে রাখো! আমি সেদিন অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করার চেষ্টা চালাব। কিন্তু তাদের অনেককে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া হবে। আমি বলব: হে আমার প্রতিপালক! তারা তো আমার প্রিয় সাথী-সংগী, আমার অনুসারী। কেন তাদের দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে? তিনি উত্তর দেবেন: আপনি জানেন না, আপনার চলে আসার পর তারা ধর্মের মধ্যে কি কি নতুন বিষয় আবিস্কার করেছে।-[ইবনে মাজাহ]
পরিশেষে সকল মুসলিম ভাই-বোনদের কাছে অনুরোধ থাকবে, আমাদের পরিপূর্ণ ইসলাম ধর্মে যাতে নতুন কিছু যোগ না করি। সেই জন্য আমাদের বেশি বেশি করে কোরআন-হাদিসের তরজুমা অর্থসহকারে অধ্যয়ন করতে হবে। মনে রাখতে ইসলাম ধর্ম নিয়ে ইহুদিচক্র কেয়ামত পর্যন্ত বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে। আর এই জন্য তারা বেছে নিয়েছে মুসলমানেদর। একটু চোখ-কান খোলা রেখে খেয়াল করলেই স্পষ্ট বুঝা যাবে, কেন আমাদের আলেম সমাজ ইসলাম নিয়ে প্রকাশ্যে চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে কথা বলেনা। প্রতিদিন বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ্যে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করা হচ্ছে। অথচ আমাদের আলেম সমাজ একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদগার নিয়ে ব্যস্ত। সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে ইহুদি চক্র।
আসুন আমরা বিদআত থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য অধিক পরিমাণে কোর-আন, হাদীস অধ্যয়ন করি। এখন ইসলামের রীতি-নীতি, শরিয়ত ইত্যাদি জানা খুবই সহজ। ইন্টারনেটে সার্চ দিলেই পাওয়া যায়। সবাই ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
মাওলানা মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম
প্রিন্সিপ্যাল, শান্তিরহাট মাদ্রসা।

Post a Comment

0 Comments