দৃষ্টিনন্দন
বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানসমূহ-
বান্দরবান জেলা পরিচিতি :
চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৯০
কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে পাহাড়ী শহর বান্দরবানের অবস্থান। প্রাকৃতিক
সৌন্দর্য সবুজে ঘেরা এ জেলার আয়তন ৪৪৭৯ বর্গ কিলোমিটার। বান্দরবান জেলার
উত্তরে রাঙ্গামাটি তার উত্তরে খাগড়াছড়ি জেলা, দক্ষিণে আরাকান
রাজ্য (মায়ানমার), পূর্বে ভারতের মিজোরাম পশ্চিমে চট্টগ্রাম ও
দক্ষিন-পশ্চিমে কক্সবাজার জেলা।বাংলার ভূ-স্বর্গ পার্বত্য জেলা বান্দরবান। এখানে রয়েছে ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙ্গালি সমপ্রদায়ের প্রায় ৫ লাখ মানুষের বসবাস। দেখলে মনে হবে যেন, প্রকৃতি যেন নিজ হাতে এলাকাটিকে সাজিয়েছে দিয়েছে। বান্দরবানের গাছ গাছালি ঘেরা পাহাড়, নদী, হ্রদ, ঝর্ণাধারার সৌন্দর্যের টানে সেখানে প্রতিদিনই
ভ্রমনকারীরা ভিড় জমাচ্ছে। শুধু দেশিয়া ভ্রমনকারী নয় বিদেশি পর্যটকের সংখ্যাও দ্রুত
হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সুবাদে সেখানে গড়ে উঠেছে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারীভাবেও গড়ে উঠেছে বেশকিছু পর্যটন স্পট, হোটেল, রেস্তোরা। সরকারীভাবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থাসহ পর্যটকদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। তাই বান্দরবান হয়ে উঠেছে পর্যটকদের কাছে প্রিয় একটি স্থান।
যাওয়া
যায় যেভাবে-
কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ছাড়া দেশের যেকোন জেলা
থেকে সর্বপ্রথম চট্টগ্রাম আসতে হবে। অত:পর চট্টগ্রাম থেকে কেরানীহাট হয়ে সড়কপথে
বান্দরবান যেতে হয়। ইদানিং বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন স্পট থেকে সরাসরি গাড়ি ছাড়ে।
চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের বাস ৩০ মিঃ
পর পর বান্দরবানের উদ্দ্যেশে ছেড়ে যায়।
বান্দরবানে দেখার মত দর্শনীয় স্থান :
v মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স
v নীলাচল
v মেঘলা
v চিম্বুক
v নীলগিরি
v সাঙ্গু নদী
v মাতামুহুরী নদী
v শৈল প্রপাত
v কেওক্রাডং
v বগালেক
v প্রান্তিক লেক
v জাদিপাই ঝরণা
v নাফাখুম জলপ্রপাত
মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রঃ যারা সংক্ষিপ্ত সময়ে দ্বিগুন আনন্দ
উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য মেঘলা অন্যতম। বান্দরবান শহরের প্রবেশদ্বার বান্দরবান
সড়ক ও পার্বত্য জেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স। এখান থেকে বান্দরবান
শহরের দূরত্ব ৪ কিলোমিটার। পাহাড়ের পাদদেশে প্রাকৃতিক সৃষ্ঠ হ্রদে বাঁধ দিয়ে
সৃষ্ঠি করা হয়েছে কৃত্রিম হ্রদ। পর্যটকদের বিনোদনের জন্য রয়েছে শিশুপার্ক, নৌকা ভ্রমনের সুবিধা, ঝুলন্ত
সেতুর মাধ্যমে চলাচলের ব্যবস্থা এবং একটি রেষ্টহাউস। আরও রয়েছে একটি চিড়িয়াখানা। মেঘলার প্রবেশ ফি জনপ্রতি ২০/-টাকা। এখানে ভ্রমনে এসে কখন যে দিন ফুরিয়ে গেছে বুঝতেই পারবেন না।
যদি এখানে রাত্রী যাপন করে প্রাকৃতির সাথে মিশতে চান তাহলে
মেঘলার পাশে অবস্থিত বান্দরবান পর্যটন মোটেল ও হলিডে ইন নামে দুইটি পর্যটন
কমপ্লেক্স। এখানে খাবার-দাবারের ও ব্যবস্থা রয়েছে।
যদি মাঝারি মানের হোটেলে থাকতে চান তাহলে বান্দরবান শহরে বাসে ১০-১৫ টাকা, টেক্সি ১২০-১৫০
টাকা তবে অন্যান্য যানবাহনের মাধ্যমেও যাতায়াত করতে পারেন।
দর্শনীয় স্থান বৌদ্ধ মন্দির/স্বর্ন মন্দির : গৌতমবুদ্ধের সম-সাময়িক
কালে নির্মিত বিশ্বের সেরা কয়েকটি বুদ্ধ মুর্তির মধ্যে এটিও অন্যতম। এখানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধ মুর্তিটি রয়েছে।
বান্দরবান শহরের প্রায় কাছাকাছি ৪
কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত এটি। বান্দরবানের উপশহর
বালাঘাটাস্থ পুল পাড়া নামক স্থানে এর অবস্থান। সুউচ্চ পাহাড়ের চুড়ায় তৈরী সুদৃশ্য
এ মন্দির। এটি বুদ্ধ ধর্মালম্বীদের একটি
পবিত্র তীর্থস্থান । এখানে দেশ বিদেশ থেকে
অনেক বুদ্ধ ধর্মালম্বী মন্দির দর্শন ও প্রার্থনা করতে আসেন। তাছাড়া এই মন্দিরের পাশ থেকে অবলোকন করা যায় নয়নাভিরাম
প্রাকৃতিক দৃশ্য যা দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যাবে। এখানে উঠার সময় পানির বোতলটি হাতে
রাখবেন। তবে পাহাড়ের চুড়াতেও পাওয়া যায়।
চিম্বুক পাহাড় : ছোট বেলায় আমরা চিম্বুক পাহাড় সম্পর্কে পড়েছি। তাই এই
পাহাড়ের আকর্ষন সবার মধ্যে রয়েছে। চিম্বুক পাহাড়ের অবস্থান বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরত্বে সমুদ্রপৃষ্ঠ
থেকে এই পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ৩ হাজার দুইশ ফুট। চিম্বুক পাহাড়ের আশে পাশে গড়ে
উঠেছে পাহাড়ী উপজাতি মুরুং (ম্রো) জনগোষ্ঠী। সরকারীভাবে এখানে স্থাপন করা হয়েছে টাওয়ার। এ টাওয়ার থেকে
পর্যটকরা কক্সবাজারের সমূদ্র সৈকত দেখার পাশাপাশি প্রাকৃতিক সবুজের সমারোহ দেখতে
দেখতে অবচেতন মনে স্রষ্ঠার কথা মনে পড়ে যাবে।
নীলগিরিঃ বান্দরবানে এসে নীলগিরি না গেলে ভ্রমনের আনন্দটা
বৃথাই মনে হবে। কারন বইয়ের পাতায় পড়া আর প্রত্যক্ষাভাবে দেখা আকাশ-পাতাল পার্থক্য।
নীলগিরিএটি বান্দরবান জেলার থানছি উপজেলায় অবস্থিত এবং এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ
পর্যটন কেন্দ্র। এর উচ্চতা প্রায় ৩২০০
ফুট। । বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৪৭ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্ব দিকে অবস্থিত এই পর্যটন
কেন্দ্র। যারা মেঘ ছোঁয়ার অদম্য মনোবাসনা দমন করে আসছেন তাদের
জন্য নীলগিরি। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন, মেঘে
গা ভাসানোর স্বপ্ন পূরনের জন্য বান্দরবানের লীলগিরিতে। বান্দরবানে যত পর্যটন
কেন্দ্র রয়েছে তম্মধ্যে নীলগিরি অন্যতম। শুধু নীলগিরি নয় পুরো পথটাই আপনাকে
আনন্দে বিভোর করে রাখবে। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দেওয়ার সময় মনে হবে আকাশে
উড়তেছি। অনাবিল আনন্দ, চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক অপরূপ
দৃশ্য দেখার সময় মনে এনে দিবে স্বর্গীয় সুখ। পাহাড়ের চুড়ায় হঠাৎ মেঘ এসে আপনাকে
মেঘের ভেতর লুকিয়ে ফেলবে তখন আনন্দের সীমা থাকবে না। তবে বর্ষাকালে মেঘের ছোয়াটা
বেশি পাওয়া যায়। তাছাড়া শুষ্ক মৌসুমে নীলগিরি থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্থ দেখা যায়।
এই পর্যটন কেন্দ্রটি সেনা নিয়ন্ত্রিত। রাত যাপনের জন্য এখানে রয়েছে আকর্ষণীয়
কয়েকটি কটেজ। তবে অগ্রীম বুকিং না দিলে হয়তো থাকা যাবে না। বান্দরবান সদর সেনা
রিজিয়নে বুকিং দেয়া যায়। নীলগিরি পর্যটনে গিয়েও সরাসরি বুকিং করা যায়। বর্তমানে
যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় নীলগিরি থেকে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যায়।
নীলগিরি যাতায়াত: দিনের মধ্যে
ফিরে আসতে চাইলে সকাল-সকাল যাওয়াই ভাল। সেখানে আসা-যাওয়ার সময়ের বাধ্যবাধকতা
রয়েছে। বান্দরবান থেকে বিকেল ৫ টার পর নীলগিরির উদ্দেশ্য কোন গাড়ী ছাড়বে না।
নীলগিরি যেতে হলে বান্দরবান জীপ ষ্টেশন থেকে জীপ অথবা বাসে করে নীলগিরি পর্যটন
কেন্দ্রে যাওয়া যায়। তাছাড়া বান্দরবান জীপ ষ্টেশন থেকে জীপ, ল্যান্ড রোভার, ল্যান্ড ক্রুজা
রসহ অন্যান্য
হালকা গাড়ী ভাড়ায় পাওয়া যায়। আপনি রিজার্ভও যেতে পারেন। নীলগিরি যাওয়ার পথে সেনা
চেকপোষ্টে পর্যটকদের নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হবে। ভাড়া সেনাবাহিনী কর্তৃক
নির্ধারিত আসা-যাওয়া-ছোট জীপঃ (৫সিট) ৩৫০০ টাকা এবং বড় জীপ (৮সিট) ৪০০০ টাকা।
মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্সঃ বান্দরবান জেলার লামা উপজেলা
শহর থেকে প্রায় ৮ কি.মি দূরে রিরিঞ্জা পাহাড়ে
অবস্থিত পর্যটন মিরিঞ্জা। সময় হতে প্রায় ২২শত ফুট উচ্চতায় মিরিঞ্জা স্পট। পাহাড় আর মেঘের লুকোচুরি মন ভুলিয়ে দেবে এখানে। প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা। এটি পিকনিট
স্পটের জন্য আদর্শ একটি স্থান। রান্না-বান্নার সুযোগ রয়েছে। এটি বিশাল এলাকা নিয়ে গঠিত। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া থেকে জীপ, বাস ও প্রাইভেট গাড়ীতে করে আসা যাবে। দূরত্ব ১৭ কি.মি। চকরিয়া হতে মিরিঞ্জা পর্যটনের ভাড়া ৫০-৬০
টাকা। লামা শহর ছাড়া সেখানে থাকার কোন ব্যবস্থা নেই বলে প্রস্তুতি নিতে হবে যাতে
দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যায়। প্রতিরুমের ভাড়া পড়বে ৪০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।
নীলাচলঃ নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রটিও শহর থেকে চার কিলোমিটার
দূরে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় নীলাচল পর্যটন
স্পটদেশি-বিদেশি পর্যটকদের অত্যন্ত
পছন্দের স্থান। গাড়িতে ও পায়ে হেঁটেও সহজে নীলাচলে যাওয়া যায়। পর্যটকের সুবিধার
জন্য নীলাচলে নির্মাণ করা হয়েছে আকর্ষণীয় কাঁচের টাওয়ার, দৃষ্টিনন্দন
সিঁড়ি, গোলঘর এবং চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট। রাত যাপনের
ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। নীলাচল হতে খোলা চোখে অনায়াসে দেখা যায় চট্টগ্রামের
কর্ণফুলী নদী। সন্ধ্যায় নীলাচল থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখা এক আনন্দময় অভিজ্ঞতা।
শৈল প্রপাতঃ বান্দরবানে যাবেন আর শৈল প্রপাত দেখবেন না, তা কি হয়। বান্দরবান-রুমা এবং থানছি সড়কের ৫ মাইল নামকস্থানে প্রাকৃতিক এই ঝর্ণার অবস্থান। শহর থেকে শৈল প্রপাতে যেতে সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। শৈল প্রপাত ঝর্ণার স্ফটিক স্বচ্ছ পানিতে গা ভেজাতে মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে।। রাস্তার পাশে শৈল প্রপাতের অবস্থান হওয়ায় এখানে পর্যটকদের ভিড় বেশি দেখা যায়।
শৈল প্রপাতঃ বান্দরবানে যাবেন আর শৈল প্রপাত দেখবেন না, তা কি হয়। বান্দরবান-রুমা এবং থানছি সড়কের ৫ মাইল নামকস্থানে প্রাকৃতিক এই ঝর্ণার অবস্থান। শহর থেকে শৈল প্রপাতে যেতে সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। শৈল প্রপাত ঝর্ণার স্ফটিক স্বচ্ছ পানিতে গা ভেজাতে মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে।। রাস্তার পাশে শৈল প্রপাতের অবস্থান হওয়ায় এখানে পর্যটকদের ভিড় বেশি দেখা যায়।
নীলাচল : নীলাচল বান্দরবান জেলার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। বান্দরবান জেলা প্রশাসনের তত্ববধায়নে
প্রতিষ্ঠিত নীলাচল পর্যটন কমপ্লেক্স । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় নীলাচল পর্যটন স্পটটি
দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অত্যন্ত পছন্দের স্থান।
গাড়িতে ও পায়ে হেঁটেও সহজে নীলাচলে যাওয়া যায়। পর্যটকের সুবিধার জন্য নীলাচলে
নির্মাণ করা হয়েছে আকর্ষণীয় কাঁচের টাওয়ার, দৃষ্টিনন্দন
সিঁড়ি, গোলঘর এবং চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট। রাত যাপনের
ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। দুরুত্ব বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ছয় ।
প্রাকৃতিক সৃষ্ঠ জলাশয় বগালেকঃ পাহাড়িরা বগার লেককে দেবতার
লেক বলে চেনে। বান্দরবানের অন্যতম সুন্দর ও দর্শনীয় স্থান বগা লেক। এটির আয়তন প্রায় ১৫ একর। এই লেকের পানির রং
একেক সময় নীল আবার একেক সময় ঘোলাটে দেখায় যা দেখে আশ্চর্য না হয়ে পারবে না। আ
রও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই লেকটি সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে প্রায় ৩০০০ ফুট উচুতে এক বিরাট পানির লেক। তবে শুষ্ক মৌসুমে যাতায়াত সুবিধা হলেও বর্ষা মৌসুমে বগালেকে যাতায়াত করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। শুষ্ক মৌসুমে বগালেকে মোটর সাইকেল কিংবা জীপ গাড়িতে করে যাওয়া যায়। বগালেক যেতে সাথে শুকনো খাবার, পানি, টর্চলাইট ও জরুরী ওষুধ সাথে রাখা দরকার। পর্যটকদের রাতযাপনের সুবিধার্থে বগালেকে জেলা পরিষদের রেষ্ট হাউজ এবং স্থানীয়ভাবে আরো দুটি গেস্ট হাউজ রয়েছে।
0 Comments