হ্যান্ডবল টুকিটাকি

হ্যান্ডবল
ফুটবল, বেসবল, আইস হকির অনেক নিয়মের সঙ্গেই মিল আছে হ্যান্ডবলের। ফুটবলে হাত দিয়ে বল স্পর্শ করতে পারে না গোলকিপার ছাড়া কেউ। তেমনি হ্যান্ডবলে হাঁটুর নিচের অংশ ব্যবহার করতে পারবে না গোলরক্ষক ছাড়া কেউ। এ ছাড়া হাত, মাথা, বাহু এমনকি হাঁটুও বৈধ। আগে একসময় আউটডোরে খেলত ১১ জন। তবে আন্তর্জাতিকভাবে খেলাটা এখন ইনডোরেই সীমাবদ্ধ। খেলোয়াড় কমে দাঁড়িয়েছে সাতে। একজন গোলরক্ষক, বাকি ছয়জন খেলবেন আক্রমণ ও রক্ষণভাগে। কোনো খেলোয়াড় তিন সেকেন্ডের বেশি বল ধরে রাখতে পারবেন না। বল নিয়ে তিন কদমের বেশি এগোনোও যাবে না। এই তিন কদমেই পাসিং, থ্রোয়িং কিংবা ড্রিবলিং করতে হবে। বাস্কেটবলে ডাবল ড্রিবলিং (ড্রিবলিং, থামা, তার পর আবার ড্রিবলিং) বৈধ হলেও হ্যান্ডবলে তা নিষিদ্ধ। শূন্যে বল তুলে ঘুষি মারতে পারবে না কেউ।



  প্রতি দলে বারো জন নিয়ে গঠিত দুটি দলের মধ্যে চামড়া দিয়ে তৈরি বল ধরতে, নিক্ষেপ করতে বা থামাতে মুখ্যত হাত দ্বারা অনুষ্ঠিত খেলা। হ্যান্ডবল খেলার পূর্ণ মাঠের দৈর্ঘ্য বা পার্শ্বরেখা ৪০ মিটার এবং প্রস্থ বা প্রান্তরেখা (goal line) ২০ মিটার। মাঠের উভয় প্রান্তে গোল লাইনের ঠিক মাঝখানে গোল পোস্টটির অবস্থান। প্রতিটি গোলপোস্ট লম্বায় ৩ মিটার এবং উচ্চতায় ২ মিটার হয়। খেলার সময়সীমা মাঝখানে ১০ মিনিট বিরতিসহ  ৭০ মিনিট। বলটি হয় গোলাকার, পরিধি ৫৮-৬০ সেন্টিমিটার ও ওজন ৪২৫-৪৭৫ গ্রাম। একজন খেলোয়াড় হ্যান্ডবল খেলায় বল ধরতে, থামাতে বা ছুঁড়ে দিতে বাহু, মাথা, পৃষ্ঠদেশ, উরু বা হাঁটু ব্যবহার করেন, তবে তিনি সর্বোচ্চ তিন সেকেন্ড পর্যন্ত বলটি হাতে অথবা মাটিতে ধরে রাখতে পারেন। বলটি ক্রসবারের নিচে গোল-পোস্টদ্বয়ের মধ্যকার দাগটি সম্পূর্ণভাবে অতিক্রম করলে একটি গোল হয়।
n¨vÛej †Ljvi mgqmxgv I wbqgvejx
ম্যাচের সময়সীমা দুই অর্ধে ৩০ মিনিট করে ৬০ মিনিট। মাঝে ১০ মিনিটের বিরতি। অনূর্ধ্ব-১৮দের বেলায় ম্যাচের পরিধি প্রতি অর্ধে ২০ বা ১৫ মিনিট করে। প্রতি অর্ধে কোনো দল 'টাইমআউট' নিতে পারবে ৬০ সেকেন্ড। স্বাভাবিক নিয়মে গোল বেশি করা দলই জিতবে। বদলি হিসেবে বেঞ্চে থাকা পাঁচ খেলোয়াড়ের প্রত্যেককে যেকোনো সময় যতবার খুশি মাঠে নামাতে পারবেন কোচ। কিছু নিয়ম : বাস্কেটবলে বিপক্ষ খেলোয়াড়ের হাতে বল থাকলে তাকে আক্রমণ করা যায় না। হ্যান্ডবলেও তাই। কোনোভাবেই বিপক্ষ খেলোয়াড়ের হাত থেকে বল কাড়া যাবে না। ধাক্কা দেওয়া যাবে না, টানাটানির তো প্রশ্নই নেই। গোলরক্ষকের জন্য নির্দিষ্ট অঞ্চলে গোলরক্ষক ছাড়া বল ছুঁতে পারবে না কেউ। বাস্কেটবলে পাঁচ আর এনবিএতে ছয়টির বেশি ফাউল করা যায় না। হ্যান্ডবলে বিপক্ষের ছন্দ নষ্ট করতে 'ফল্টস' করা যায় ইচ্ছেমতো। আজকাল ফুটবল বা ক্রিকেটারদের দেখা যায় ১১৯ কিংবা ৯৯ নম্বর জার্সিতে। হ্যান্ডবলে জার্সি নাম্বার ১ থেকে ২০-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মাঠে কখনোই ঘড়ি, আংটি, স্বর্ণের চেইন, তাবিজ পরা যায় না। রেফারি : ম্যাচ পরিচালনা করেন দু'প্রান্তে দুই রেফারি। প্রতি ১০ বা পাঁচ মিনিট অন্তর প্রান্ত পরিবর্তন করেন তাঁরা। দুই মিনিটের সাসপেনশন নিয়মিত শাস্তি হ্যান্ডবলে।

 প্রত্যেক দলে সাতজন খেলোয়াড়। একজন গোলরক্ষক, বাকি ছয়জন আক্রমণ ও রক্ষণভাগে * কোনো খেলোয়াড় তিন সেকেন্ডের বেশি বল ধরে রাখতে পারবেন না। বল নিয়ে তিন কদমের বেশি এগোনোও যাবে না * ম্যাচের সময়সীমা দুই অর্ধে ৩০ মিনিট করে ৬০ মিনিট। মাঝে ১০ মিনিটের বিরতি * গোলরক্ষকের জন্য নির্দিষ্ট অঞ্চলে গোলরক্ষক ছাড়া আর কেউ বল ছুঁতে পারবে না * জার্সি নাম্বার ১ থেকে ২০-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ * মারাত্দক ফাউলের জন্য হলুদ এবং ফাউল আরো গুরুতর হলে লাল কার্ড


হ্যান্ডবল একটি প্রাচীন খেলা। গ্রিক কবি হোমারের ওডিসি মহাকাব্যে এই খেলার উলে­খ আছে। খ্রিস্টপূর্ব যুগে নীল নদের উপত্যকা ভূমিতে বল নিয়ে যেসব খেলা প্রচলিত ছিল তার সব কটিই ছিল হাতের খেলা। তবে খেলার ধরন-পদ্ধতির দিক দিয়ে আজকের হ্যান্ডবল সম্পূর্ণ নতুন একটি সংযোজন। কেউ কেউ মনে করেন আধুনিক আউটডোর হ্যান্ডবল খেলার জন্ম জার্মানিতে। ১৯০৪ সালে ডেনমার্কের জনৈক ক্রীড়াশিক্ষক হোলজার নিয়েলসেন হ্যান্ড বোল্ডনামে একটি খেলা প্রবর্তন করেন। ১৯১৭ সালে মহিলাদের ক্রীড়াশিক্ষক বার্লিনের ম্যাক্স হিসার মেয়েদের জন্য অভিনব পদ্ধতিতে হ্যান্ডবল খেলার প্রবর্তন করেন। ১৯১৯ সালে অন্য একজন ক্রীড়াশিক্ষক কার্ল শিলেঞ্জ এই খেলায় তাঁর নিজস্ব কিছু পদ্ধতি সংযোজন করে খেলাটিকে সমৃদ্ধ করেন। তিনিই প্রথম খোলা মাঠে এই খেলার আয়োজন করেন। ১৯২০ সালের ১ জানুয়ারি বার্লিনে প্রথম শিলেঞ্জের পদ্ধতিতে দুই দলের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক হ্যান্ডবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯২৩ সালে ম্যাক্স হিসার পদ্ধতিতে বার্লিন ও ড্রেসডেন দলের মধ্যে প্রথম দুটি মহিলা দলের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।




১৯২৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর হ্যালিম্যালিতে জার্মান ও অস্ট্রিয়া দলের মধ্যে প্রথম আন্তর্জাতিক হ্যান্ডবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। পরে এর নিয়মকানুন পুনর্বিন্যাস করা হয়। ১৯২৮ সালে আমস্টারডামে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, গ্রিস, অস্ট্রিয়া, সুইডেন ও চেকোশ্লোভাকিয়া এই ১১টি দেশ নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল অ্যামেচার হ্যান্ডবল ফেডারেশন গঠিত হয়। ১৯৩৬ সালে বার্লিনে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকে খোলা মাঠে হ্যান্ডবল খেলা দেখানো হয়। এরপর থেকে হ্যান্ডবল খেলা খুব জনপ্রিয় হতে থাকে। ১৯৬৫ সালে মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটির বৈঠকে ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিকে হ্যান্ডবল অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর ইউরোপে খেলাটি আরও জনপ্রিয়তা পায়।
১৯৭৪ সাল থেকে এশিয়ায় হ্যান্ডবল জনপ্রিয়তা পেতে থাকে। ঐ বছর তেহরানে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমস উপলক্ষে সমবেত ক্রীড়া সংগঠকদের উদ্যোগে এশিয়ান হ্যান্ডবল ফেডারেশন গঠিত হয়। ১৯৭৬ সালে কুয়েতে ফেডারেশন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কুয়েতে ফেডারেশনের সদর দফতর প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশে হ্যান্ডবল খেলার আনুষ্ঠানিক প্রচলন ঘটে ১৯৮৩ সালের জুন মাসে। ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আয়োজিত ছেলেদের একটি প্রদর্শনী খেলার মাধ্যমে স্টেডিয়ামে প্রথম হ্যান্ডবল লিগ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে প্রথম জাতীয় মহিলা হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতা এবং পৃথকভাবে পুরুষ ও মহিলাদের প্রথম বর্ষাকালীন হ্যান্ডবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন চিফ মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রিটর অফিসের কন্ফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত ক্রীড়ামোদীদের এক সভায় বাংলাদেশ হ্যান্ডবল অ্যাসোসিয়েশেন প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনে রূপান্তরিত হয়। বাংলাদেশ হ্যান্ডবল রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনও গঠিত হয় ১৯৮৫ সালে।
বাংলাদেশ হ্যান্ডবলের অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে থাকে। ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত হংকং আন্তর্জাতিক হ্যান্ডবল টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের মহিলা আনসার দল অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। ১৯৯১ সালে কমনওয়েলথ ইয়ুথ চ্যাম্পিয়ানশিপে ছেলেদের দল তৃতীয় স্থান অর্জন করে১৯৯২ সালে ডেনমার্কে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়নশিপে ঢাকার ভিকারুনন্নিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ অংশ নেয়। ১৯৯৪ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত চতুর্থ কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপে ঢাকার ব্রাদার্স ইউনিয়ন অংশগ্রহণ করে। ১৯৯৫ সালে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ ইয়ুথ হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়ানশিপে বয়েজ এবং গার্লস দল চ্যাম্পিয়ান হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।








১৯৯৬ সালে ভারতের জয়পুর অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়ানশিপের আসরে বাংলাদেশের পুরুষ দল তৃতীয় স্থান অর্জন করে। ১৯৯৫ সালে ঢাকায় ৩টি দেশ নিয়ে অনুষ্ঠিত ২য় সাউথ এশিয়ান হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ রানার আপ হয়। ষষ্ঠ এশিয়ান মহিলা জুনিয়র হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়নশিপ ২০০০ সালের ২৫-৩১ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপান, চীনা-তাইপে, ভারত, নেপাল ও স্বাগতিক বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে।
বাংলাদেশ ২০০০ সালের ঢাকা আসরে রানার্স আপ এবং ২০০৮ সালের ভারত আসরে তৃতীয় স্থান অর্জন করে। বাংলাদেশ মহিলা হ্যান্ডবল দলের শায়েলা পারভিন শিখা বেস্ট প্লেয়ারপুরস্কার লাভ করে।
২০০৮ সালে ভারতের লখনৌতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সাউথ এশিয়ান উইমেন হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়ানশিপে বাংলাদেশ মহিলা হ্যান্ডবল দল রানার্স আপ হওয়ার সম্মান অর্জন করে।
এছাড়া ২০১০ সালের সাফ হ্যান্ডবলে পুরুষ দল তৃতীয় স্থান এবং ভারতের হলদিয়াতে অনুষ্ঠিত হ্যান্ডবল ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ হ্যান্ডবল দল চ্যাম্পিয়ান হওয়ার গৌরব অর্জন করে। বাংলাদেশ মহিলা হ্যান্ডবল দলের শাহিদা খাতুন বেস্ট প্লেয়ারঅ্যাওয়ার্ড লাভ করে। ২০১০ সালের আইএইচএফ চ্যালেঞ্জ ট্রপিতে বাংলাদেশ পুরুষ হ্যান্ডবল দল তৃতীয় স্থান অর্জন করে। 


Post a Comment

0 Comments