ব্রাজিলে বাংলাদেশী
ফুটবল দুনিয়ার অন্যতম
পরাশক্তি ব্রাজিল। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পেরু, বলিভিয়া, উরুগুয়ে
, চিলি, ভেনিজুয়েলা সবগুলোই
লাতিন আমেরিকার দেশ। যদিওবা আমরা ব্রাজিল দেশটি সম্পর্কে তেমন কিছু জানিনা কিন্তু
ফুটবলের দেশ হিসাবে বাংলাদেশেও ব্রাজিলের সাপোর্টর এর পরিমাণ বিশ্বকাপ খেলায় বুঝা
যায়। ব্রাজিলে প্রায় ৩০ লাখের লেবানিজের বসবাস। তাছাড়া পাকিস্থানী, ইন্ডিয়ান, ফিলিস্থিনী,
বাংলাদেশ মূলতঃ তাদের কল্যানেই শিল্পনগরী পারানাসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে গড়ে উঠেছে
হালাল ফুড ইন্ডাস্ট্রির এক বিশাল জগত। এখানে থাকতে থাকতে অনেকে
আবার নাগরিকত্ব পেয়ে গেছে। ব্রাজিলের অভিবাসী আইন অনুযায়ী ব্রাজিলে অবস্থিত সকল
অভিবাসীর পর্যায়ক্রমে ব্রাজিলের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ব্রাজিলে বর্তমানে পাঁচ
হাজারের উপরে বাংলাদেশি আছে। এদের মধ্যে অল্প সংখ্যক বৈধ পথে
আসলেও অধিকাংশ অবৈধ পথে বিভিন্ন বিভিন্নভাবে
ব্রাজিল এসেছে। এখান থেকে আবার অনেকে
বাংলাদেশি বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে আমেরিকা
চলে গেছে।
ব্রাজিলের অর্থনীতি সব
রাজ্যে সমান নয়, আটলান্টিক
মহাসাগরীয় অঞ্চলের রাজ্যগুলো ধনী। তাই ব্রাজিলে অবস্থানরত অধিকাংশ বাঙ্গালী আটলান্টিক মহাসাগরীয় ধনী
রাজ্যগুলোতে বাস করে। বর্তমানে
বাংলাদেশিরা সুনামের সাথে ব্রাজিলে বসবাস করে।
ব্রাজিলে স্থায়ী বসবাস
করা - নতুন অভিবাসন আইনে
১ বছরের মধ্যে সে ব্রাজিলের পারমানেণ্ট রেসিডেন্ট পাওয়া যায়। তবে
ক্ষেত্র বিশেষে দেরিও হতে পারে। ব্রাজিলে ‘এ্যাসাইলাম’ তথা
রাজনৈতিক আশ্রয়ের সুযোগ কাজে লাগিয়ে শতকরা ৯৯ ভাগ বাংলাদেশি দেশটিতে বৈধভাবে
বসবাসের সুযোগ পেয়েছেন।
বর্তমানে প্রায় ৯৯%
বাংলাদেশী ব্রাজিলের পার্মানেন্ট নাগরিকত্ব অর্জন করে সুখে দিন কাটাচ্ছে। যদি ব্রাজিলের পার্মানেন্ট কার্ড পাওয়া
যায় তাহলে আমেরিকা, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়াটা খুবই সহজ হয়ে যায়। তাই যাদের জরুরি
ভিত্তেতে ব্রাজিলের পার্মানেন্ট কার্ড দরকার তারা এই
সময়ের মধ্যেই সুযোগ খুঁজে নেন ‘কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ’ বা চুক্তিভিত্তিক বিবাহের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বৈধ হওয়ার। কন্ট্রাক্ট
ম্যারেজের জন্য চুক্তিভিত্তিক পাত্রিকে ১০০০-৩০০০ ইউএস ডলারের বিনিময়ে পার্মানেন্ট
কার্ড পেতে হয়, অনেকে ভাগ্যের জোরে বিনা খরচেও উক্ত
কার্ড পাওয়া যায়।
তবে সব কিছুই নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট মেয়ে বা মহিলার মর্জির ওপর। অন্যান্য দেশের মতো
ব্রাজিলেও লাখ ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে রেসিডেন্স কার্ড পাওয়ার প্রথা চালু আছে, তবে
এবিষয়ে আমি নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য আদায় করতে পারিনি।
ব্রাজিলে বাংলাদেশিদের জীবন যাপন : ব্রাজিলের অন্যতম রাজ্য পারানা অঞ্চলে প্রায় ১৫০০ এর উপর বাংলাদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন । এই
অঞ্চলে বাংলাদেশিরা তাদের
কর্মদক্ষতা,
নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম ও সততার দৃষ্টান্ত
রেখেছেন বলে স্থানীয় মালিকরা বাংলাদেশিদের পছন্দ করেন।
সাও পাওলোর
বেশীরভাগ বাংলাদেশি ছোটোখাটো ব্যবসা করে, ব্রাজিলিয়ান অর্গানাইজারদের মাধ্যমে
সাও পাওলো থেকে ব্রাজিলের বিভিন্ন রাজ্যের শহরে বাস ভর্তি মাল নিয়ে মেলায় অংশগ্রহণ
করে। বিভিন্ন ব্যবসা ও সুযোগ সুবিধা বেশি থাকায় বেশিরভাগ বাংলাদেশিরা সাও পাওলো
শহরে বসবাস করে। তাছাড়া এই এলাকা কিছুটা মুসলিম অধ্যুষিত বিধায় সৌদি সরকার ও ইরান সরকারের অর্থায়নে নির্মিত দুইটি বড় মসজিদও রয়েছে এই শহরে।
বাংলাদেশিরা ঈদের সময় সহ বিভিন্ন সময়ে অবসর পার করতে আসে এই শহরে। অন্যান্য অভিবাসী মুসলমানদের বাংলাদেশি মুসলিমরাও মসজিদ দুইটিতে নামাজ আদায় করে। রমজানের তারাবী ও ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করে বেশিরভাগ মুসলিম। বেশ বড় মসজিদ,
ভিতরে বাহিরে মিলে দুই তিন হাজার লোক একসঙ্গে নামাজ পড়তে
পারে। রমজানে মাসব্যাপী মসজিদে ইফতারি বিতরণ ও ঈদের নামাজের পরও মুসল্লীদের খাবার
বিতরণ করে স্থানীয় আরব বংশোদ্ভূত ব্রাজিলিয়ান মুসলমানরা। ঈদের নামাজ মসজিদ সহ
আশেপাশের রাস্তা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে যায়।
সাও পাওলোর বাংলাদেশিরা মোটামুটি ভালো আছে। এখানে বাংলাদেশি
মালিকাধীন রেস্টুরেন্ট সহ পাইকারি ও খুচরা দোকানপাট আছে। এখন মোটামুটি সবাই ভালো
অবস্থানে আছে। কেউ ফেরিয়া করছে, আবার কেউ এখানেই দোকানপাটসহ খাওয়ার হোটেল খুলে বসেছে।
বিভিন্ন তথ্য মতে দেখা যারা ব্রাজিলে ফেইরা করেন তারা মাসে কমপক্ষে ১
লক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকা ইনকাম করেন। এমনও বাংলাদেশী ভাই আছেন যারা মাসে ৫/১০ লক্ষ টাকাও ইনকাম
করেন।
ব্রাজিলে ব্যবসা করতে অনেক টাকা মূলধন দরকার হয়না। শুধু মেধা থাকলেই হয়। সাও পাওলতে অনেক বাংলাদেশি সফল ব্যবসায়ী রয়েছেন।
ব্রাজিলে ব্যবসা করতে অনেক টাকা মূলধন দরকার হয়না। শুধু মেধা থাকলেই হয়। সাও পাওলতে অনেক বাংলাদেশি সফল ব্যবসায়ী রয়েছেন।
চাকুরির
জগত থেকে দূরে থেকে যারা ব্যবসায়ির খাতায় নাম লিখিয়েছেন, তারাই
খুব ভালো আছেন অর্থনৈতিকভাবে। নিয়ম অনুয়ায়ী ব্রাজিলিয়ান প্রভাবশালী লোকজন মেলা বা
বাজারের ইজারা নিয়ে থাকে প্রশাসনের কাছ থেকে এবং তাদের কাছ থেকেই ৩ থেকে ৪ দিনের
জন্য বিশেষ মূল্যে স্টল কিনে নিতে হয় বাংলাদেশিদের। আলাদা করে সরকারকে টেক্স দিতে
হয় না
ব্রাজিলে
দূর দূরান্তের মেলায় যেসব বাংলাদেশিরা জমজমাট ব্যবসা করে থাকেন তাদের প্রায় সবারই
দুই নম্বর মাল, অর্থাৎ নাইক-এ্যাডিডাসের মতো
পণ্যগুলো হুবহু নকল পণ্যের ব্যবসা করে থাকেন। এগুলো দেখতে এবং ব্যবহারে অরিজিনাল
পণ্যের মতো। চাইনিজদের স্টাইলে বাংলাদেশিরাও ফ্লোরসহ ভবন ভাড়া নিয়ে পুলিশের চোখ
ফাকি দিয়ে এসমস্ত পণ্য তৈরী করে। তবে মাঝে মধ্যে ধরাও পড়ে।
পার্টনারশিপে ব্যবসা করা শ্রেয়। এতে কষ্ট কম তবে লাভ একটু কম। আর অংশীদারিত্ব বাদ দিয়ে চোখ-কান খোলা রেখে একক ব্যবসায় মাসে ৮-১০ হাজার ইউএস ডলারও খুব কঠিন নয়।
সাবধানতা : সাও পাওলোর ডাউনটাউনে ‘ব্রাইস’ এলাকাটি যেন ‘বুড়িগঙ্গার ওপাড় জিঞ্জিরা’। এককথায় ‘ক্রাইম জোন’। সব হয় এখানে, পাওয়া যায় সব কিছুই। ব্রাইস-এর অন্ধকার জগতে অন্যান্য দেশিদের সাথে অবাধ বিচরণ বেশ কিছু বাংলাদেশির। মজার ব্যাপার হচ্ছে, স্থানীয় পুলিশের একটি অংশ নিয়মিত কমিশন পেয়ে থাকে সাও পাওলোর ‘জিঞ্জিরা’ খ্যাত ‘ব্রাইস’ এরিয়া থেকে।
0 Comments