নেইমারের বেড়ে উঠা


নেইমারের বেড়ে উঠা
ফুটবলের দেশ ব্রাজিল। ফুটবল হচ্ছে ব্রাজিলের শিল্প এখানে জম্ম নিয়েছে ফুটবল যাদুগর কালোমানিক খ্যাত পেলে। ২০১৮ সালের এক জরিপে দেখা যায় শুধু ব্রাজিলেই রয়েছে ২২ হাজার বিশ্বমানের ফুটবল খেলোয়াড়। প্রতি বছর ব্রাজিলে তৈরী হচ্ছে নতুন নতুন নান্দনিক ফুটবলার। যাদের বেশি দামে বিক্রী করা হয় ইউরোপের নামি-দামি ক্লাবগুলোতে।


নেইমারের ক্ষেত্রে রয়েছে ভিন্নতা। ২০০৩ সালে নেইমার খেলা শুরু করেছিলেন পর্তুগুয়েসা স্যান্টিস্টা নামের ক্লাবের এক যুব দলে। তার খেলা দেখে মুগ্ধ হয় সকলে। ফলে ব্রাজিলের প্রথম সারির ক্লাব স্যান্টোস এফসি-এর চোখে পড়ে যায় এই খুদে। নেইমার এবং তার পরিবার মিলে সিদ্ধান্ত নেন যে সে এখন স্যান্টোস এফসিতেই খেলবেন। সেই সময় নেইমার সান্তোসের হয়ে জুনিয়র দলে খেলছিল। জুনিয়র দলে থাকা অবস্থায় নেইমার পেশাদার ফুটবলে আবির্ভাব। নেইমারের ফুটবল কারিসমা দেখে সর্বপ্রথম নজর কাড়ে ইংল্যান্ডের নামকরা ক্লাব ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড এর। অবিশ্বাস্যভাবে ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড নেইমারকে কেনার জন্য ১২ মিলিয়ন পাউন্ডের অফার দেয়। কিন্তু তার নিজ দেশের ক্লাব সান্তোস নেইমারকে হাতছাড়া করতে নারাজ। সান্তোস সুতরাং ১২ মিলিয়ন পাউন্ডের অফার ফিরিয়ে দেয়। বিশ্বফুটবলের জগতে রাতারাতি  পরিচিত হয়ে গেল নেইমার।

নেইমারের পুরো নাম Neymar da Silva Santos Júnior. ৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৯২ সালে সাওপাওলোর মোগি ডাস ক্রুজ শহরে জন্মগ্রহন করেন। নেইমার ডা সিল্ভা জন্মগ্রহণ করেন সাও পাওলো, ব্রাজিলে সিনিয়র নেইমার ডা সিল্ভা এবং মাতার নাম নান্দিনি সান্তোস। নেইমারের বাবা ছিলেন একজন ফুটবলার সেই সুত্রে বাবা তার ছেলেকে নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন এবং পরবর্তীতে নেইমারের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। নেইমারের শৈশব হতে শুরু  করে তার খেলোয়াড় জীবনে তার পিতার ভূমিকা অতুলনীয়। তাঁর পিতা সব সময় নেইমারের সঙ্গ দিতেন এবং তার পাশে থেকে সব কিছুর পরামর্শ দিতেন। নেইমার তার পিতার আদর্শেই বড় হয়েছেন এবং পিতাকে সব সময়ের বন্ধু হিসেবে গ্রহন করেছেন। ২০০৩  সালে, নেইমার তাঁর পরিবারের সঙ্গে সাঁও ভিসেন্তে চলে আসেন। সেখানে তিনি যুব পর্তুগিসা সানতিস্তাতে খেলা শুরু করেন। ২০০৩ এর শেষে তাঁরা সান্তসে চলে আসেন। সেখানে নেইমার সান্তস ফুটবল ক্লাবে যোগ দেন।

১৪ বছর বয়সে নেইমার রিয়্যাল মাদ্রিদের যুব টিমে খেলার অফার পান কিন্তু স্যান্টোস এফসি নেইমারকে হাতছাড়া করতে নারাজ। অন্যদিকে নেইমারের উজ্জ্বল ভবিশ্যতের হাতছানি। কিন্তু সান্টোস বোনাস ঘোষণা দিয়ে নেইমারকে বেঁধে ফেলেন। নেইমার এরই মধ্যে প্রচুর পরিমানে ফুটবল ম্যাচ খেলতে শুরু করেন। ২০১০ সালে নেইমার ১৯ ম্যাচে ১৪ টি গোল করে দলকে Campeonato Paulista League  জিততে সাহায্য করেন। তার এই দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য তাকে লিগের বেস্ট প্লেয়ার হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। একই বছরে ক্লাবের হয়ে মোট ৪৮ টি ম্যাচ খেলেন।
 
নেইমারের এই সাফল্যের খবর বিদেশি ক্লাবগুলির কাছেও পৌছে যায়। নেইমারের কাছে সুযোগ চলে আসে স্পেন বা ইংল্যান্ডের ক্লাবগুলিতে খেলার। কিন্তু স্যান্টোস নেইমারকে ছাড়তে রাজি নয়। তাই তার বেতনের ৫০% বৃদ্ধি করে দেয় ক্লাবটি।

বিশ্বে নামী-দামী খেলোয়াড়ের কথা আসলে নেইমারের নামটা বাদ যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। পৃথিবীর পরিচিত মুখের মধ্যে নেইমার অন্যতম। তার ফুটবল স্কিলে নতুনত্ব এবং উইং দিয়ে অ্যাটাক ভক্তরা দারুন উপভোগ করে। ফুটবল জগতে তার বিশাল ভক্ত তৈরী হয়েছে। নাইকি, প্যানাসনিক, স্যান্টানডার, ভগসওয়াগেন এর মতো বিশ্বসেরা কোম্পানীগুলো তার পিঁছনে টাকা খরচ করছে।
 ২০১০ সালের ১০ আগষ্ট নেইমারের জন্য শুভদিন। এই দিন দেশের জার্সি গায়ে আমেরিকার বিরুদ্ধে তার অভিষেক হয়। অভিষেক ম্যাচে তার ক্রীড়ানৈপুন্য ও ডিভিলং-এ সকলের নজর কেড়ে নেন। সেই সুবাধে নেইমার দলের নিয়মিত প্লেয়ার হিসেবে নিজের আসন পাকাপোক্ত করে নেন। দেশের হয়ে ২০১২ সালে নেইমার অলিম্পিক থেকে সিলভার মেডেল নিয়ে নেন এবং অলিম্পিকে ০৩ টি গোল করে বিশাল সম্মান অর্জন করেন। নিজ দেশে অনুষ্ঠিত ২০১৩ সালে কনফেডারেশান কাপগোল্ডেন বল জিতে নেইমার।

Post a Comment

0 Comments